টাঙ্গুয়ার হাওর, বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মিঠা পানির জলাভূমি, প্রকৃতির এক অপার সৌন্দর্যের লীলাভূমি। সুনামগঞ্জের এই হাওরকে বলা হয় 'বাংলার কাশ্মীর' বা 'বাংলাদেশের সুন্দরবন'। শীতকালে হাজার হাজার পরিযায়ী পাখির কলতানে মুখর থাকে এই হাওর। টাঙ্গুয়ার হাওর ভ্রমণের জন্য একটি বিস্তারিত গাইড নিচে দেওয়া হলো:
কখন যাবেন
টাঙ্গুয়ার হাওর ভ্রমণের সেরা সময় হলো বর্ষাকাল (জুন-সেপ্টেম্বর) এবং শীতকাল (নভেম্বর-ফেব্রুয়ারি)।
বর্ষাকাল: হাওর তার পূর্ণ যৌবন ফিরে পায় বর্ষায়। চারপাশে শুধু পানি আর পানি। এ সময় নৌকা ভ্রমণ করে পুরো হাওরের সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়।
শীতকাল: এ সময় হাওরের পানি কমে যায় এবং পরিযায়ী পাখিরা এসে ভিড় করে। পাখির কলকাকলি শুনতে চাইলে শীতকালে যাওয়া ভালো।
কীভাবে যাবেন
ঢাকা থেকে
ঢাকা থেকে বাসে করে সুনামগঞ্জ যেতে পারেন। শ্যামলী, হানিফ, এনা পরিবহনসহ আরও অনেক বাস সার্ভিস রয়েছে। রাতের বাসে রওনা হলে ভোরবেলা সুনামগঞ্জ পৌঁছে যাবেন।
বাস: ভাড়া ৫০০-৮০০ টাকা। সময় লাগবে প্রায় ৬-৭ ঘণ্টা।
ট্রেন: ঢাকা থেকে সরাসরি সুনামগঞ্জ যাওয়ার কোনো ট্রেন নেই। ট্রেনে যেতে হলে সিলেট গিয়ে সেখান থেকে বাসে বা সিএনজিতে সুনামগঞ্জ যেতে হবে।
সুনামগঞ্জ থেকে
সুনামগঞ্জ বাস স্ট্যান্ড থেকে সিএনজি বা মোটরসাইকেলে করে তাহিরপুর যেতে হবে। এটি টাঙ্গুয়ার হাওরের প্রবেশদ্বার।
সিএনজি/মোটরসাইকেল: ভাড়া ১০০-১৫০ টাকা। সময় লাগবে প্রায় ১-১.৫ ঘণ্টা।
কোথায় থাকবেন
তাহিরপুরে থাকার জন্য বেশ কিছু হোটেল ও গেস্ট হাউস আছে। তবে খুব বেশি উন্নতমানের হোটেল এখানে নেই।
হোটেল: তাহিরপুরে সাধারণ মানের কিছু হোটেল আছে, যেখানে প্রতি রাতে ৫০০-১৫০০ টাকায় থাকতে পারবেন।
নৌকায় রাত কাটানো: বর্ষাকালে অনেক পর্যটক নৌকা ভাড়া করে হাওরে রাত কাটান। এটি একটি দারুণ অভিজ্ঞতা। নৌকায় থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা থাকে।
কী দেখবেন
শহীদ সিরাজ লেক (নিলাদ্রি লেক): এই লেকের স্বচ্ছ নীল পানি আর পাহাড়ের অপরূপ দৃশ্য আপনাকে মুগ্ধ করবে।
টেকেরঘাট চুনাপাথর খনি: এখানে পুরোনো চুনাপাথরের খনি এবং লাইমস্টোন কোয়ারি দেখতে পাবেন।
যাদুকাটা নদী: ভারত থেকে নেমে আসা এই নদীর স্বচ্ছ জল এবং নদীর দুই ধারের বালুচর দেখতে খুবই সুন্দর।
বারিক্কা টিলা: যাদুকাটা নদীর পাশে অবস্থিত এই টিলা থেকে ভারত সীমান্তের পাহাড় এবং নদী দেখতে পাওয়া যায়।
শিমুল বাগান: তাহিরপুরে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় শিমুল বাগান রয়েছে। ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাসে গেলে লাল শিমুল ফুলের মন মুগ্ধকর দৃশ্য দেখতে পাবেন।
নৌকা ভাড়া
টাঙ্গুয়ার হাওর ভ্রমণের জন্য নৌকা ভাড়া করা সবচেয়ে ভালো উপায়। বড় ও ছোট দুই ধরনের নৌকা পাওয়া যায়।
ছোট নৌকা: ২-৫ জনের জন্য উপযুক্ত। ভাড়া দিনে ২০০০-৪০০০ টাকা।
বড় নৌকা: ১০-২০ জনের জন্য উপযুক্ত। ভাড়া দিনে ৫০০০-১০০০০ টাকা।
নৌকা ভাড়া করার আগে ভালো করে দরদাম করে নেবেন। পুরো দিনের জন্য নৌকা ভাড়া করা ভালো, এতে সব দর্শনীয় স্থান ঘুরে দেখা যায়।
কিছু টিপস
বর্ষাকালে নৌকা ভ্রমণের সময় বৃষ্টি থেকে বাঁচতে ছাতা বা রেইনকোট নিয়ে যান।
শীতে গেলে হালকা গরম কাপড় নিয়ে যান, কারণ রাতে ঠাণ্ডা লাগতে পারে।
সাঁতার না জানলে লাইফ জ্যাকেট ব্যবহার করা জরুরি।
হাওরের পরিবেশ পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করুন। যেখানে সেখানে ময়লা ফেলবেন না।
বোট মালিক এবং মাঝির সাথে আগে থেকে সব বিষয়ে কথা বলে নিন।
বোট ভাড়ার সময় অবশ্যই লাইফ জ্যাকেট, ফার্স্ট এইড বক্স এবং টয়লেটের ব্যবস্থা আছে কিনা দেখে নেবেন।
টাঙ্গুয়ার হাওরের সৌন্দর্য উপভোগ করতে দলবদ্ধ হয়ে ভ্রমণ করা সবচেয়ে ভালো। এটি আপনার ভ্রমণকে আরও আনন্দদায়ক এবং সাশ্রয়ী করবে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন