শ্রীমঙ্গল, বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের এক অনবদ্য প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমণ্ডিত স্থান,
যা
'চা-রাজধানী' হিসেবে সুপরিচিত। সবুজের
চাদরে
মোড়ানো
উঁচু-নিচু টিলা আর
মেঘের
লুকোচুরি খেলা
দেখতে
প্রতি
বছর
হাজারো
পর্যটক
এখানে
ভিড়
করেন।
আপনার
শ্রীমঙ্গল ভ্রমণকে আরও
সুন্দর
ও
সহজ
করে
তোলার
জন্য
একটি
বিস্তারিত গাইড
নিচে
দেওয়া
হলো।
কীভাবে
যাবেন?
- ট্রেন: ঢাকা থেকে শ্রীমঙ্গল
যাওয়ার সবচেয়ে ভালো উপায় হলো ট্রেন। পারাবত এক্সপ্রেস, জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস, কালনী এক্সপ্রেস বা উপবন এক্সপ্রেস-এর মতো ট্রেনগুলো আপনাকে স্বাচ্ছন্দ্যে পৌঁছে দেবে। রাতের ট্রেনে রওনা হলে সকালে শ্রীমঙ্গল পৌঁছে যাবেন এবং সারাদিন ঘোরাফেরার জন্য হাতে যথেষ্ট সময় পাবেন।
- বাস: যারা বাসে যেতে স্বাচ্ছন্দ্য
বোধ করেন, তারা ঢাকা থেকে এনা, হানিফ বা শ্যামলী পরিবহনের বাসে যেতে পারেন। এই বাসগুলো সরাসরি শ্রীমঙ্গল পর্যন্ত যায় এবং যাত্রা তুলনামূলকভাবে কম সময়সাপেক্ষ।
কোথায় থাকবেন?
শ্রীমঙ্গলে থাকার
জন্য
বিভিন্ন মানের
হোটেল
ও
রিসর্ট
রয়েছে।
আপনার
বাজেট
ও
রুচি
অনুযায়ী যেকোনো
একটি
বেছে
নিতে
পারেন।
- বাজেট-বান্ধব: শহরের মধ্যে অনেক সাধারণ মানের হোটেল আছে, যেমন - হোটেল প্লাজা, টি গার্ডেন রিসর্ট। এখানে কম খরচে ভালো থাকার ব্যবস্থা
আছে।
- লাক্সারি রিসর্ট: নিরিবিলি
ও
বিলাসবহুল পরিবেশে থাকতে চাইলে শ্রীমঙ্গল টি রিসর্ট, গ্রান্ড সুলতান টি রিসর্ট অ্যান্ড গলফ বা লেক ভিউ রিসর্ট-এর মতো জায়গা বেছে নিতে পারেন।
শ্রীমঙ্গলের
আকর্ষণীয় স্থান
শ্রীমঙ্গলের মূল
আকর্ষণ
তার
সবুজ
প্রকৃতি। এখানে
কিছু
এমন
জায়গা
আছে,
যা
আপনার
মনকে
একেবারে জয়
করে
নেবে।
- চা বাগান: শ্রীমঙ্গলের
সর্বত্রই চা বাগান। শুধু একটি বিশেষ স্থান নয়, পুরো শ্রীমঙ্গলই যেন এক বিশাল চা বাগান। গাড়িতে করে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যাওয়ার সময়েই চা বাগানের অপরূপ সৌন্দর্য দেখতে পাবেন। সবুজ আর শান্ত পরিবেশ আপনার মনকে মুগ্ধ করে দেবে।
- লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান: শ্রীমঙ্গলের
কাছেই এই গ্রীষ্মমণ্ডলীয় বনটি প্রকৃতিপ্রেমীদের জন্য একটি স্বর্গ। বনের ভেতর দিয়ে হেঁটে গেলে নানা ধরনের গাছপালা, প্রাণী ও
পাখির দেখা মিলবে। এখানকার ট্রেকিং-এর অভিজ্ঞতা খুবই রোমাঞ্চকর।
- মাধবপুর লেক: কমলগঞ্জ উপজেলার এই লেকটি চারপাশের
চা বাগান দিয়ে ঘেরা। লেকের স্বচ্ছ জলে চা বাগানের প্রতিচ্ছবি এক অসাধারণ দৃশ্য তৈরি করে। এখানে বিকেল বেলা কাটাতে পারেন বা নৌকা ভ্রমণও করতে পারেন।
- হামহাম জলপ্রপাত: যারা ট্রেকিং ও অ্যাডভেঞ্চার ভালোবাসেন, তাদের জন্য হামহাম ঝর্ণা এক দারুণ গন্তব্য। তবে এটি ট্রেকিং করার জন্য একটু কষ্টসাধ্য, তাই আরামদায়ক জুতো ও
পর্যাপ্ত পানি সঙ্গে নিয়ে যাওয়া উচিত।
- বাইক্কা বিল: পাখির অভয়ারণ্য
হিসেবে পরিচিত এই বিলটি। বিশেষ করে শীতকালে এখানে নানা ধরনের অতিথি পাখির আগমন ঘটে। যারা পাখি দেখতে ভালোবাসেন, তাদের জন্য এটি একটি আদর্শ স্থান।
বিশেষ আকর্ষণ:
সাত রঙের চা
শ্রীমঙ্গলে গেলে
সাত
লেয়ারের চা
অবশ্যই
একবার
পান
করবেন।
এটি
নীলকণ্ঠ টি কেবিন-এর
এক
বিশেষত্ব। এক
কাপেই
সাতটি
ভিন্ন
ভিন্ন
স্বাদের চা
আপনাকে
অবাক
করে
দেবে।
ভ্রমণ টিপস
- পরিবহন: শ্রীমঙ্গলের
বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখার জন্য সিএনজি বা প্রাইভেট কার ভাড়া করতে পারেন। স্থানীয় সিএনজি ড্রাইভাররা নির্দিষ্ট টাকায় সারাদিনের জন্য ঘোরাফেরার প্যাকেজ দিয়ে থাকে।
- পোশাক: বর্ষাকালে
ছাতা বা রেইনকোট এবং শীতকালে হালকা গরম কাপড় সঙ্গে রাখা ভালো।
- নিরাপত্তা: নির্জন এলাকায় গেলে দলবদ্ধভাবে
যান এবং স্থানীয়দের থেকে তথ্য নিয়ে নিন।
শ্রীমঙ্গলের সবুজে
মোড়ানো
প্রকৃতি আপনাকে
এক
অসাধারণ অভিজ্ঞতা দেবে।
আশা
করি,
আপনার
শ্রীমঙ্গল ভ্রমণ
স্মরণীয় হয়ে
থাকবে!
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন